পড়ালেখা শেষে বেকারত্বের অপবাদ থেকে মুক্তি পেতে ছোট্ট পরিসরে শুরু করেছিলো হাঁস-মুরগির প্রজেক্ট। যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সামান্য পুঁজির প্রজেক্টের শুরুতেই লোকসান। এমন পরিস্থিতিতে হতাশায় ভেঙ্গে না পরে কৈ ও তেলাপিয়া মাছের রেনু, চারা পোনার পাশাপাশি হাড়িভাঙ্গা, নারিকেল, লেবু এবং বেদানার গাছ দিয়ে শুরু হয় আরেকটি বিকল্প প্রজেক্ট। এখানেও আশানুরুপ লাভ নেই। অবশেষে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও পরিবারের সহযোগিতায় এগারো লক্ষ টাকা নিয়ে শুরু হয় ‘রাস্তার মাথা হ্যাচারী’ প্রজেক্ট। এরপর পিছনে ফেলে আসা লোকসান আর তাড়া করেনি তাকে। রবং দিন দিন প্রজেক্টের পরিসর বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বেড়েছে লাভের অংকটাও। ২০০৮ সালে পড়ালেখা শেষ করা বেকার যুবকটি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। এটি তেত্রিশ বছর বয়সী শাহিনুর ইসলাম
রাজনের সফলতার গল্প। তার মা মাসুদা বেগম একজন গৃহিনী।
সরেজমিনে রাজনের ‘রাস্তার মাথা হ্যাচারী’তে আলাপচারিতায় উঠে আসে সফলতার গালগল্প। মাত্র ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করা হাঁস-মুরগির সেই প্রজেক্টের লোকসানই তাকে সামনে এগিয়ে যাবার সাহস যুগিয়েছে বলেও জানান তিনি। বর্তমানে রাস্তার মাথা হ্যাচারী থেকে প্রতি মাসে ২ লক্ষ টাকার বেশি আয় হচ্ছে তার।
রাজন বলেন, ‘বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতেই ২০০৬ সালে যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। শুরুতে হাঁস-মুরগির খামার করে লোকসান হওয়ায় বিকল্প প্রজেক্টের চিন্তা করি। এসময় আমার পাশে দাঁড়ান যুব উন্নয়নের কর্মকর্তাসহ পরিবারের সদস্যরা। তাদের পরামর্শেই সম্মন্বিত প্রজেক্ট গড়ে তোলা চেষ্টা করি। সেখানে কৈ, তেলাপিয়া মাছের পোনা উৎপাদনের পাশাপাশি বিশাল পরিসরে হাড়িভাঙ্গা, নারিকেল, লেবু ও বেদানার গাছ রোপন করি। এখান থেকেও আশানুরুপ লাভ হয়নি। তারপরও থেমে যায়নি। পরবর্তীতে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাদের পরামর্শে বড় পরিসরে ‘হ্যাচারী’র প্রজেক্টে মনোনিবেশ করি। এরপর থেকে আর লোকসান হয়নি’।
নয় একর জমিতে গড়ে ওঠা রাস্তার মাথা হ্যাচারী নামের এই প্রজেক্টে বর্তমানে দেশী শিং, মাগুর, টেংরা, কৈ, পাবদা, তারা বাইমসহ বিভিন্ন মাছের রেনু ও চারা পোনার উৎপাদন ও সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে যে কোন সময় ৫ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার রেনু ও চারা পোনার সরবরাহের পাশাপাশি মাছের উন্নত খাবার সরবরাহ, বাজারজাতকরণ এবং পুুকুরের যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় রাস্তার মাথা হ্যাচারী সেই সুনাম অর্জন করেছে।
রাজন বলেন, বাংলাদেশে টেংরা ও তারা বাইম মাছের কোন টেকনিক্যাল প্রজনন ব্যবস্থা না থাকায় শুরুতে তার অনেক সমস্যা হয়েছিলো। পরবর্তীতে সে নিজ প্রচেষ্টায় টেংরা ও তারা বাইমের প্রজনন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এসময় সমাজের বেকার, হতাশাগ্রস্থ যুবকদেরকে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছোট্ট পরিসরে হলেও বিভিন্ন প্রজেক্ট শুরু করে সাবলম্বী ও দারিদ্রতা দূর করে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য চেষ্টার করার পরামর্শ দেন।
বর্তমানে রাস্তার মাথা হ্যাচারীতে ২০ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক রয়েছেন। যাদের নিরন্তন প্রচেষ্টার সাথে রাজনের দৃঢ়তা ও সাহস এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে হাজারো যুবকদের।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS